দিদার ডায়েরি (শেষ পর্ব)

দিদার ডায়েরি (শেষ পর্ব)
Spread the love

৬২ বছর আগে একা কেদার-বদ্রি ঘুরে এসেছিলেন এক বাঙালি মহিলা সুবাসিনী গুহ। তাঁর সেই ভ্রমণ-ডায়েরি বাঙালিনামায় ধারাবাহিক লেখায়।  (বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে)

সুবাসিনী গুহ

১৪ই মে সোমবার

ব্রহ্মকপালীতে পিন্ডদান দিলাম । লক্ষ্মীকে পুজা দিয়া নথ দিলাম | আজ তপ্তকুন্ডে ডুব দিয়া স্নান করিলাম । কাল ডুব দিতে পারি
নাই জল খুব গরম ছিল | পাশেই ঝর্নার জল – সুন্দর জায়গাটা , মনে হয়না এত উপরে আছি। কাল বেলা চারটায় পচা আবার হনুমান চটিতে গিয়াছিল খবর পাইয়া যে চোরকে ছাড়িয়া দিয়াছে। টাকা নন্দ পায় নাই। যাক পথে আর কোনো গোলমাল না হইলে হয়। জয় বদ্রিনারায়ন। খাইয়া উঠিলাম ডাল ভাত আলু একটা মালপো| এসব দিকে খুব কষ্ট খাওয়ার, তেল মশলা নাই। ছাগলের পিঠে ছোট ছোট থলিতে মালপত্র আসে | খাবার সব ঘী ভাজা। ফলে ভাত খাওয়া হয় নাই। রাত্রে আধখানা রুটি ও আলুর ঝোল খাইলাম | জুতা ও লোককে দিবার জন্য আংটি, হার কিনিলাম | সন্ধায় আরতি দেখিলাম। বীণা মহারাজ নামগান করেন সন্ধ্যায়, খুব সুন্দর লাগে | মন্দিরের উপরের সব সোনার। নারায়ণের ঘরের চাল সোনার | সামনে গরুড় ভগবানের মূর্তি। বড়ো রূপার ট্রে তার ওপর রূপার বড়ো বাটি। নারায়ণের প্রণামী রূপার বাটিতে দেয়৷ দরজা রূপার |

১৫ ই মে মঙ্গলবার

সকালে উঠিয়া মৌনীবাবাকে দেখিয়া আসিলাম | অনেক উপরে ছোট পাথরের গুহায় আছেন। প্রণাম করিয়া ১ টাকা দিলাম। আমাদের চা প্রসাদ দিলেন। আশীর্বাদ চাহিলাম – ইঙ্গিতে জপ করিতে বলিলেন । কিছুক্ষণ থাকিয়া চলিয়া আসিলাম।
বৃষ্টি পড়িতেছে। বৃষ্টির মধ্যেই নারায়ণ দর্শন করিয়া দোকানে হাত পা সেঁকিয়া চা খাইয়া বাড়ী আসিলাম। আজ মোহান্তকেও
দেখিলাম, বাচ্চা মত সুন্দর চেহারা, হাতে দুগাছা প্লেন সোনার বালা । আরতি ভোগ ইত্যাদি উনিই দেন। ভোগের ঘর দেখিলাম | আরও উপরে সাধুদের গুহা আছে । মৌনীবাবা একাই ১২ মাস এখানে থাকেন । নেংটিপরা ভষ্মমাখা | দুপুরে খাইলাম প্রসাদ – ভাত , কারী ,ডাল, আলুর তরকারী , মালপো। আজ প্রসাদের খরচ আমরা দিব। কাল পান্ডা খাওয়াইয়াছে। রোদ্র উঠিয়াছে। এখন পান্ডা সুফল করাইবে। দু খানা বই ও দুখানা ছবি কিনিলাম | নন্দও ছবি কিনিল | আট আনা কুলিকে দিলাম | আজ একাদশী ১৫ টাকা সুফল করিল। ৯ টায় রওনা হইয়া হনুমান চটিতে পৌঁছাইলাম | পথে ১ মাইল বরফ । এবার বদ্রিনারায়ণে চল্লিশ ফুট বরফ পড়িয়াছে। অনেক চড়াই উঠিতে হইল | রাস্তা সারান হইতেছে। ৭ মাইল রাস্তা হাটিলাম। এই চটিতেই নন্দর টাকা চুরি হইয়াছিল। আজ আর স্নান হইবেনা। বিশ্রাম করিয়া আবার হাঁটা । আজ একাদশী । যতক্ষণ পারিব হাঁটিবো। না পারিলে কান্ডি করিব। নন্দ খুব হাঁপাইয়া পড়িয়াছে। খাইয়াই আমরা রওনা হইয়াছি। হনুমান চটি হইতে আড়াই মাইল আসিয়াছি। এই রাস্তায় চটি ও দোকান কম। রাস্তা অনেক উল্টাপাল্টা হওয়াতে পাঁচ মাইলের জায়গায় প্রায় সাত মাইল হাঁটিতে হইল। পুরান দলের সাথে দেখা। তারা আজ বদ্রিনাথ পৌঁছাইবে| আমরা রওনা হইলাম । লামবগর চটি হইয়া সন্ধ্যে ছয়টায় পান্ডুকেশ্বর গৌঁছাইলাম। বেলা নয়টা হইতে হাঁটিতেছি। মাবখানে হনুমান চটিতে আধঘন্টা বসিয়াছি। সাড়ে তের মাইল মত আজ হাঁটিয়াছি। এক দোকান ঘরের উপরে
আশ্রয় নিয়াছি। দুধ পাওয়া গেলনা। ১ খানা রুটি একটু ডাল আর একটা মিষ্টি খাইয়া শুইয়া প়িলাম। ব্যাগে কিছু গরম জল
অনিয়াছিলাম। রাতে ভালো ঘুম হইল।

১৬ ই মে বুধবার

সকালে একটা সানলাইট কিনিয়া দুই খান ধুতিতে সাবান দিলাম। ভালো ভাবে দিতে পারিলামনা। তাড়াইয়া দিল। নন্দর সঙ্গে এক কাপ চা খাইয়া হাত পা সেঁকিয়া আসিলাম। বড়ো ঠান্ডা। খিচুড়ি হইতেছে , খাইয়া যোশীমঠ রওনা দিব ৮ মাইল । হাঁটিতে
না পারিলে কান্ডি নিব। স্নান করিয়া আসিলাম। খিচুড়ি আলু সেদ্ধ দিয়া খাইলাম। একটু মিষ্টি পড়াতে খিচুড়ি খাইতে ভালো হইয়াছিল । বুড়ো আঙুলে ফোস্কা পড়িয়াছে। পাউডার দিয়া ন্যাকড়া বাঁধিয়া জুতা পরিলাম | এখান হইতে যোশীমঠ ৮ মাইল | সেখান হইতে বাস। হাটাপথ শেষ। তিন মাইল আসিলাম। ভীষণ রোদ । পাহাড়ের তলায় বসিয়া বিশ্রাম নিতেছি। আরো পাঁচ মাইল। রাস্তা খুব খারাপ । বড়ো বড়ো পাথর, পথ সরু, জল, চড়াই সব রকমই আছে। একটু দাঁড়াবার জায়গা পাই না। একটু জল চাহিয়া খাইলাম | আমাদের জল লোককে দিয়া ফুরাইয়া গিয়াছে । সামনে প্রায় এক মাইল চড়াই। আলগা পাথর | সামনের লোক পা হড়কাইলে একেবারে নিচে পড়িবে । তার ওপর ঘোড়া মালবাহী আর কান্ডি। বড়ো ভয়াবহ রাস্তা। সন্ধ্যে ছয়টায় অনেক কষ্ট করিয়া যোশী মঠ গৌঁছিলাম। দোতলার উপর একটা ঘর পাইলাম। দিন ২ টাকা ভাড়া । এত চড়াই হইবে বুঝিতে পারি নাই। ভীষণ কষ্ট হইয়াছে। ঔষধ খাইলাম | নন্দ ও আমি একটা ভালো দোকানে সিঙ্গারা, লেডিকেনি ও বালুসাই খাইলাম | এখানটা বেশ শহরের মত। অনেক দোকান পসার ইত্যাদি । কুলীকে আট সের মাল বাবদ আট টাকা দিলাম । যোশীমঠ হইতে রুদ্রপ্রয়াগ বাসের টিকিট পাইলে কাল রওনা হইবো। ভাড়া সাড়ে চার টাকা | ৭০ মাইল বাসে সেও খুব কষ্ট 1

১৭ ই মে বৃহস্পতিবার

ভোর বেলা বাসে বসিলাম। ছয়টায় বাস ছাড়িবে। ফাস্ট ক্লাস ভাড়া সাড়ে ছয় টাকা| জয় বদ্রি বিশাল। শীতের ছয়মাস বদ্রি নারায়ণের পুজা এইখানেই হয়। দূরে এখনও পাহাড়ের উপর বরফ দেখা যায়। বাস ছাড়িল। পথে মালবাহী ১০০ – ২০০
ছাগলের দল প্রায়ই গাড়ীর গতিরোধ করে । যাক বেলাকুঠি গাড়ী দাঁড়াইলো | কতক্ষণ থাকে জানিনা | অনেক নীচে নামিয়া আসিয়াছি। বাস চলার পরও দু ফুট রাস্তা পাশে থাকে, কিন্তু দেখিলে তা আরো কম মনে হয়। দেশলাই বাক্সের মত কত উপরে টলিতে টলিতে ১০/১৫ খানা গাড়ি নামিতেছে। বরফের পাহাড় আর দেখা যায়না । লোকেদের কাছে শুনিলাম ফাস্ট ক্লাসের ভাড়া এবার বাড়িয়া সাড়ে আট টাকা হইবে৷ সামনের গাড়িটার কিছু বিগড়াইয়াছে প্রায়ই দাঁড়াইয়া পড়ে। আমাদের গাড়ি ৪র্থ। পিছনে 8/৫ টা গাড়ি দাঁড়াইয়া আছে। সরু রাস্তা কতক্ষণ এই ভাবে থাকিবে কে জানে । ১০ মিনিট বাদে আগের গাড়ি ছাড়িল। পিপুলকোঠী পৌঁছাইলো বেলা নটা | রহিল আধঘন্টা । এক গ্লাস চা ২ আনা । ওই সহযোগে সিঙ্গারা ও বালুসাই। এইসব খাইতে খাইতেই আজকের দিন যাইবে । একটা ঝুড়ি কিনিলাম এক আনা। সাড়ে দশটায় চামোলী তে গাড়ি দাঁড়াইল। বড়ো স্টেশন। এই লাইনে গাড়িতে আর অন্য কথা যাত্রীদের মুখে নাই শুধু বদ্রি বিশালের জয়গান । হিন্দুস্থানী স্ত্রী পুরুষ মিলিয়া গান করে। বাকী সব ঢুপ। কোথাও গাড়ি থামিলে সব স্বাভাবিক অবস্থা পায়। গাড়ি সব লাইনে দিয়া দাঁড়ায় । সামনের গাড়ি চলতে আরম্ভ করিলেই ১৫ -১৭ খানা চলিতে আরম্ভ করিবে। কতক্ষণ যে অপেক্ষা করিবে ঠিক বোবা যায়না বা কেহ বলেনা । কাজেই নামিতে হইলে খুব তাড়াতাড়ি করি । পরে দেখা যায় গাড়ি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিতেছে । ৩০ মিনিট দেরী করিয়া গাড়ি ছাড়িল। একটু গিয়া আবার দাঁড়াইল | এখানে দু সারি গাড়ী দাঁড়াইল | এক সারি যোশীমঠের দিকে আরেক সারি উল্টাদিকে । অনেক গাড়ি জমা হইয়াছিল এবার একটাকে ঠেলিয়া সরাইয়া কিছু পরিষ্কার হইতেছে। একটা গাড়ি মেরামত হইল – বেলা বারোটায় সব গাড়ি
ছাড়িল। বেলা সাড়ে বারোটায় নন্দপ্রয়াগে নন্দ স্নান করিল। বেলা একটায় বাস ছাড়িল। রুদ্রপ্রয়াগে বেলা দুইটায় | ডায়রী খানা বাসের গদির পেছনে পড়িয়া গিয়াছিল। অনেক কষ্টে খুঁজিয়া পাইলাম । এখানে ২০ মিনিট থামিল। বেলা তিনটায় গৌচর | অনেকটা সমতল জায়গা । অনেক ক্ষেত আছে। গাড়ি ১৫ মিনিট দাঁড়াইল। এরপর গলটি আর তোরাতি হইয়া বেলা পাঁচটায় রুদ্রপ্রয়াগ। আধ মাইল হাঁটিয়া একটা দোকান ঘরের উপর জায়গা পাইলাম । এখন এটাই আমাদের বাড়ী। যেখানে লাঠি ফেলিয়া
গিয়াছিলাম। তাহা পাইলাম । ভাগ্য তাই এই ঘরটাই পাইয়াছি। গা ধুইয়া অনেকদিন পর সুতির জামা কাপড় পড়িলাম | আগে একেবারে শীতে হি হি করিয়াছি । এখন তেমন শীত নাই । অনেকদিন বাদে দুধ পাইলাম । রাত্রে দুধ রুটি খাইয়া শুইয়া পড়িলাম।

১৮ই মে শুক্রবার

আজকে একটু সর্দি হইয়াছে । এতদিন এসব ছিলনা | বাসে ভীষণ ধুলা লাগিয়াছে। কয়েকজন বৃন্দাবন যাইতেছে । আমরা কাশী হইয়া কলিকাতা ফিরিব | মালপত্র বুঝিয়া নিলাম | চায়ের সাথে একটা আ্যানাসিন খাইব | নন্দ কলে সাবান কাচা করিল । আমি নদীতে গিয়া দুইখান ধুতি কাচিয়া আনিলাম। ১৩৭ সিঁড়ি ভাঙ্গা সোজা নয় । এখন অনেক বাঙ্গালী দেখিতেছি। আমরা মরশুমে অনেক আগে যাইয়াছিলাম তখন বেশীরভাগ অবাঙ্গালী। কাল সকালে হৃষিকেশ রওনা হইব। একদিন পুরা বাসে থাকিতে হইবে । আলু ভাতে ডাল ভাতে ঘি দিয়া খাইলাম | এইখানে আজ দুপুরে শুনিলাম একটা স্থানীয় লোক ভাসিয়া গেল। যা স্রোত নদীতে ভয় করে | এখন বেলা চারটে । নন্দ, পচা ও আমি যাই বাসস্ট্যান্ডে একটু ঘুরিতে | কাল রওনা হইয়া সন্ধ্যে আটটা পর্যন্ত বাসে থাকিতে হইবে। বাসস্ট্যান্ডে বেড়াইয়া আসিলাম অনেক বাঙ্গালী যাত্রী আসিয়াছে – বলিল তাহারা চ্যাটার্জি স্পেশালে আসিয়াছে। ১৫০ লোক । ছবি, এবি কে আজ চিঠি দিলাম | বেশ গরমের আভাস পাইতেছি। যতই আগাইব ততই গরম হইবে। কালকের জন্য খাবার কিছু ভালো পাওয়া গেলনা । রাস্তায় যা পাওয়া যায় তাই খাইব। চা সিঙ্গারা খাইলাম। দোকানের ছেলেটাকে গায়ের চাদরটা দিলাম।

১৯ শা মে শনিবার

ভোর পাঁচটায় জিনিষ নিয়া রেডি হইলাম । কুলী নিয়া আগে পচা গেলো । নন্দ আর আমি পরে আসিয়া বাস স্ট্যান্ডে বসিলাম। ৮ টায় বাস ছাড়িবে। রুদ্রপ্রয়াগ , যেন এই জায়গায় অনেকবার আসিয়াছি। এটা বাড়ীর মত মনে হইতেছিল। জয় বদ্রি বিশাল।
সাড়ে আটটায় বাস ছাড়িল। সারাদিন বসিয়া থাকিতে হইবে। স্নান খাওয়া বন্ধ , তেমনি ধুলা , খুবই কষ্টকর অবস্থা। আমরা পাহাড়
হইতে এবার নামিতেছি ক্রমেই – আর জীবনে এই রাস্তায় আসা হইবেনা| সামনের গাড়ী দাঁড়াইয়া পড়িলে, সামনের পিছনের ১৪/১৫ খানা গাড়ী দাঁড়াইয়া যায়, উপায় নাই কারুর আগাইবার | কালিয়া চটি বেলা সাড়ে নটা৷ সব গাড়ী দাঁড়াইল | এবার প্রবল ধাক্কা দিয়া গাড়ী ছাড়িল – এদিকের রাস্তা সরু। বেলা এগারোটা। শ্রীনগরে একটা পাম্পিং স্টেশন আছে । অনেক খানি সমতল জায়গার উপর সুন্দর বাড়ী ঘর | এখানে গাড়ী দেরী করিবে। আমরা এবার নামি। কলে ভীষণ ভীড় । একটা দোকানে বসিলাম। যাওয়ার সময় শ্রীনগর নামিয়া সঙ্গে সঙ্গে বাস পাওয়াতে কিছু দেখি নাই। জংশন স্টেশন | পিচ দেওয়া সুন্দর রাস্তা | খুব মিলিটারি গাড়ী চলে । ভাতের হোটেল অনেক আছে। পুরী তরকারী দই খাইলাম । বেঞ্চের একদিকে ভাত খাইতেছে, একদিকে আমরা পুরী খাইলাম। যে দেশে যেমন আচার | গাছে অঙ্কুরের মত আম হইয়াছে। ২টায় বাস ছাড়িল। বেলা ৪ টায় দেবপ্রয়াগে গৌঁছাইল। ১৫ মিনিট দাঁড়াইল | পচা ,নন্দ আর আমি চা ও ঘুগনি খাইলাম। ঘুগনি ভালো হইয়াছিল বেশ। এখানে যাওয়ার সময় কাজ করিয়াছিলাম – ২ রাত্রি ছিলাম । বেরানি আসিলাম সন্ধ্যে ছয়টা | রাত্রি সাড়ে আটটায় হৃষিকেশ আসিলাম। ভগবান ধর্মশালা জায়গা দিলনা । গোপাল কুটিরের বারান্দায় জায়গা পাইলাম । ৭৫ মাইল একভাবে বসিয়া আসা _ শরীরের আর কিছু নাই।
কাল হরিদ্বার রওনা হইৰ সকালে । আধ মাইল হাঁটিয়া দোকানে গিয়া দুধ রুটি পাইলাম । এবার ফিরিয়া আসিয়া ঘুম।

২০শা মে রবিবার

রাত্রে বেশ ঘুম হইয়াছিল। এখন হরিদ্বার রওনা হইব | হৃষিকেশ হইতে হরিদ্বার ১৫ মাইল। সকাল সাড়ে আটটায় হরিদ্বার নামিলাম। বিনায়ক ধর্মশালায় ভালো একটা ঘর পাইলাম । মাথা , জুতা, জামা কাপড় যতদুর পারি সাবান দিয়া একটু ভদ্রস্থ হইলাম। ভিখারী বা পাগলীর বেশ হইয়াছিল। নন্দ রান্না করিতেছে টেঁড়স ও পালংশাক – খাইয়া আসিলাম। বিকালে হর _ কি _ পউরি গিয়া আরতি দেখিলাম, প্রদীপ ভাসাইলাম। ২ টা গালিচা , আমার চটি কিনিলাম | অনেকদিন পর দিনের বেলা খুব ঘুম হইয়াছিল ।

২১শা মে সোমবার

রাতে বেশ ঘুম হইয়াছে। কাল দইবড়া খাইয়াছিলাম | একটু কাশি হইয়াছে । অনেকদিন পরে ঘরে চা করিয়া খাইলাম। পুদিনার চাটনি বাটিলাম | পায়েস, তরকারী,ডাল ও কুমরাভাতে রান্না হইতেছে । আমি বেলায় হর কি পউরি তে স্নান করিয়া আসিলাম। বাজারে আম, লিচু, ফুটি, তরমুজ নানাফলে ভর্তি। এখন খাওয়া হইল | নন্দ বাসন মাজিতেছে। আমাকে মাজিতে দিলনা । শরীরটা বিশেষ ভালো না। আধ পো দুধ খাইলাম।

২২শা মে মঙ্গলবার

আজ রাত্রের গাড়ীতে কাশী রওনা হইব । সকালে বাহির হইয়া গঙ্গায় স্নান করিয়া বাজার করিয়া আসিলাম। রাস্তার জন্য আলুর
তরকারী হইতেছে। ১ ঘর বাঙ্গালী যাত্রী আসিয়াছে রান্না করিয়া গিয়াছে, সেই উনানে ২টা বেগুন পোড়া দিলাম। ৪টায় আমাদের
বিছানা বাঁধা হইয়া গেল। গাড়ীতে কেমন ভীড় হইবে কে জানে। সাড়ে সাতটায় বাড়ী হইতে আসিয়া গাড়ীতে বসিলাম | বসিবার একটু জায়গা পাইলাম | নয়টা বারোতে ছাড়িবে। জয় বিশ্বনাথ। গাড়ীর নাম বেনারস এক্সপ্রেস।

আগের পর্বের লিঙ্ক- https://bangalinama.com/kedar-bodri-diary-part-3/


Spread the love

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *