প্রকৃতিকে কাছে পেতে হলে চলুন ঝান্ডি

প্রকৃতিকে কাছে পেতে হলে চলুন ঝান্ডি
Spread the love

অঙ্ঘিজ্রা বসু ভট্টাচার্য

বেশ কয়েক দিন ধরেই মন টা বেশ উড়ু উড়ু করছিল। আনেকদিন কোথাও যাওয়া  হয়নি। ক্যালেন্ডারের পাতায় দোলের আগের দিন রবিবার দেখে  ঠিক করে নিয়েছিলাম যে এবার কাছে পিঠে কোথাও বেরোতেই হবে। চার চাকার বাহনটিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম হিমালয়ের কোলে বেড়ে ওঠা ছোট্ট একটি গ্রাম ঝান্ডির উদ্দেশে। লোকমুখে অনেকবার এই পাহাড়ি গ্রামটির অনাবিল প্রাকৃতিক  সৌন্দর্যের কথা শুনেছিলাম, এবার চাক্ষুষ উপলব্ধি করলাম।

শহর শিলিগুড়ি থেকে ঘন্টা দু-আড়াইয়ের জার্নি। ডুয়ার্সের পথ ধরে ডামডিম হয়ে গোরুবাথান। এরপর লাভাগামী রাস্তা ধরে এক্টু এগিয়েই পড়বে আপার ফাগু টি এস্টেট। রাস্তার দুধার দিয়ে মনোরম সবুজ চা গালিচা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কিছুটা এগোতেই চেল নদী। কাঠের ব্রিজের  ওপর গিয়ে দাঁড়িয়ে আসাধারণ কিছু মুহূর্ত মুঠোফোনে বন্দি করে নিলাম। একদিকে খরস্রোতা নদীর জলধারা অন্যদিকে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়। আমরা ঝান্ডির দিকে এগোতে থাকলাম। তখনও ভাবিনি যে প্রকৃতির এক অদ্ভুত খেলা দেখার সাক্ষী হতে যাচ্ছি। সাদা মেঘের লুকোচুরি খেলা চারিদিকে। ঘন কুয়াশা ঢেকে দিচ্ছে  রাস্তাঘাট। পরক্ষণেই এক পশলা বৃষ্টি। সূয্যি মামা উঁকি দিতেই ঝান্ডির আকাশ পরিস্কার। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা আমাদের গন্তব্যে পোঁছে গেলাম।

রোদ-মেঘ-বৃষ্টির এই লুকোচুরি খেলাই এখানকার বৈশিষ্ট্য। হিমালয়ের এই নৈসর্গিক পরিবেশে আপনি আনায়াসে সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে পারেন। চারপাশে শাল ও পাইনের ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বন, ও ভারতের কিছু বিরল হিমালয় উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল এই ঝান্ডি নামের ছোট্ট গ্রামটি। চারিদিক দিয়ে চা বাগান দ্বারা বেষ্টিত গ্রাম, এখানকার চমৎকার জলবায়ু এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এটিকে উত্তরবঙ্গের এখনও অনাবিষ্কৃত রত্নগুলির মধ্যে একটি করে রেখেছে। শীতকালে প্রকৃতিপ্রেমী ও অ্যাডভেঞ্চার উৎসাহীদের কাছে ঝান্ডি খুবই জনপ্রিয়। শীতকালে সুর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় কাঞ্চনজাঙ্ঘা্র আসাধারণ রূপ দেখতে পাওয়া যায় ঝান্ডি ভিউ পয়েন্ট থেকে।

কালিম্পং জেলার গোরুবাথান ব্লকের ডুয়ার্স অঞ্চলে অবস্থিত, ঝান্ডি হল লাভা থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬২০৫ ফুট উপরে অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম। যেহেতু এটি গোরুবাথানের কাছাকাছি অবস্থিত, তাই এখান থেকে দর্শনার্থীরা পশ্চিম ডুয়ার্সের গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন, যেমন গোরুমারা (প্রায় ৫০ কিমি) এবং চাপড়ামারি (প্রায় ৪৩ কিমি) ঘুরে দেখতে পারেন।

সাব-হিমালয় প্রজাতির জন্য বনে হাইকিং প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। সিনচুলা ও রোভারস পয়েন্ট পর্যন্ত ট্রেক সহ এই অঞ্চলে দুর্দান্ত ট্রেকিং রুটের বিকল্প রয়েছে, যেখান থেকে খুব ভোরে তুষার আচ্ছাদিত পাহাড়ের চূড়া থেকে সূর্যের অপূর্ব সোনালী রশ্মি দেখা যায়। নেওড়া উপত্যকা বনের মাঝখানে অবস্থিত সামাবিওং জৈব চা বাগান। বায়োডাইনামিক চা চাষের মাধ্যমে জন্মানো তাদের অনন্য স্বাদযুক্ত সুগন্ধযুক্ত চা দেশে-বিদেশে বিখ্যাত। কোলাখামের বিখ্যাত চেঞ্জি জলপ্রপাতের অত্যাশ্চর্য স্ফটিক জল এবং স্বর্গীয় পরিবেশও বিশ্রামের জন্য উপযুক্ত।

লাভা বৌদ্ধ মঠটি পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় যাঁরা ভিড় বা কোলাহল থেকে দূরে কিছু একাকী সময় কাটাতে চান, যাঁরা মেডিটেশান বা আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস করেন তাঁদের কাছে যেন এটি   প্রশান্তির একটি মরূদ্যান। গোরুবাথান এলাকায় চেল নদী এবং ঘন সবুজ বনে ঘেরা ফাফারখেতির গ্রামও রয়েছে, যা পিকনিক এবং আধ্যাত্মিক পুনর্জীবনের জন্য একটি আদর্শ স্থান।

 কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান:-

সমব্যং চা বাগান

কোলাখাম, চেঞ্জি জলপ্রপাত

লাভা

ঋষপ

বার্মেক

রামদুরাহ

সিলেরিগাঁও

ইচ্ছাগাঁও

গীতখোলা

নকদরা লেকে বোটিং করার জন্য

নেওড়া উপত্যকা

কালিম্পং ডেলো

যারা ঝান্ডিতে থাকতে ইচ্ছুক তাঁরা অনেক ধরনের হোম স্টে পাবেন। আমরা বেছে নিয়েছিলাম মনোরম ইস্টি কুটুম ফার্ম স্টে। পাহাড়ের বুকে যাঁরাই একটু বাঙালিয়ানার  স্বাদ নিতে চান, তাঁদের জন্য এটি একটি এমন পরিবেশবান্ধব সম্পত্তি যেখানে আপনি মনের মত খাবার তো পাবেনই, অন্যান্য অত্যাধুনিক পরিষেবাগুলিও পাবেন। পাহাড়ের বুকে হোম স্টেগুলিতে সাধারাণত স্থানীয় নেপালি খাবারদাবারের চলটাই বেশি। কিন্তু অনেকেই চান বাঙালিয়ানার স্বাদ নিতে। এখানে আপনি শুক্তো, সজনে ডাঁটা, বড়ি দিয়ে নিরামিষ সব্জি যেমন পাবেন, তেমনি কলকাতা বিরিয়ানিও পাবেন  যার স্বাদ নিতে আপনাকে আসতেই হবে ঝান্ডি। তাজা বাগান থেকে জৈব সবজি তুলে এখানে সরবরাহ করা হয়। ইস্টি কুটুম ফার্ম স্টের কর্ণধার শুভম পোদ্দারের আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। কলকাতার ছেলে শুভম এখন প্রকৃতির টানে পুরোপুরি পাহাড়ের বাসিন্দা। তার সঙ্গীসাথীরা আপনাকে নাচে-গানে-কবিতায় মাতিয়ে রাখবে। বেশ কিছু বাংলা সিনেমা, সিরিয়াল এবং ওয়েব সিরিজের শুটিংও হয়েছে এই হোম স্টে-তে।

ইস্টি কুটুম ফার্ম স্টে যাওয়ার রাস্তাটিও খুব সুন্দর এবং রোমাঞ্চকর। ঝান্ডির শান্ত পরিবেশ, ‘বার্ডিং ওয়াক’ এবং বার্ড-ওয়াচিংএর জন্য পুরোপুরি উপযোগী। এটি এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। সিকাডাস বা বুশ ক্রিকেটের শব্দে ভরপুর।  অনেক রঙিন পাহাড়ি পাখি যেমন রুফাস-নেকড হর্নবিল, চেস্টনাট বেলিড রক থ্রাশ, প্যারটবিল, হিল ময়না এবং গ্রেট বারবেটদের, এখানে আনাগোনা যা জায়গাটিকে একটি রোমাঞ্চকর পাখির স্বর্গে পরিণত করে রেখেছে। কলকাতা থেকে প্রায় ৭৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, ঝান্ডি বছরের যে কোনো সময় ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।

যাঁরা কলকাতা থেকে আসবেন 

ট্রেনের ক্ষেত্রে- তাঁরা এন জে পি স্টেশন থেকে সোজা ঝান্ডি আসার গাড়ি পেয়ে যাবেন। ভাড়া পড়বে –  বোলেরো বা জাইলো ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। মালবাজার থেকে ঝান্ডি ২০০০ থেকে ২৫০০  (একটি গাড়িতে ৭জন)।

সবচাইতে ভাল রুট- কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস শিয়ালদা থেকে রাত ৮.৩৫ এ ছাড়ে, নিউ মালবাজার জংশনে সকাল ৯.১৫তে পৌঁছে যায়। সেখান থেকে ঝান্ডি ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট।

বিমানের ক্ষেত্রে—বাগডগরা এয়ারপোর্ট থেকে সোজা ঝান্ডি আসার গাড়ি পেয়ে যাবেন। ভাড়া পড়বে –  বোলেরো বা জাইলো ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। মালবাজার থেকে ঝান্ডি ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা (একটি গাড়িতে ৭জন)।

ইস্টি কুটুম ফার্ম স্টে

ট্যারিফ

টুইন শেয়ারিং ভিত্তিতে ডিলাক্স রুমের জন্য ২৫০০ টাকা

টুইন শেয়ারিং ভিত্তিতে স্ট্যান্ডার্ড রুমের জন্য ২২০০ টাকা

প্রতিদিন ৭০০ টাকায় মাথাপিছু খাবার, যার মধ্যে ৩টি আমিষ খাবার এবং ১টি ভেজ স্ন্যাকস সন্ধ্যার রিফ্রেশমেন্টের জন্য।

সকালের চা

সকালের নাস্তা

মধ্যাহ্নভোজ

সন্ধ্যায় রিফ্রেশমেন্ট

রাতের খাবার

ডিফল্ট আবাসনের মধ্যে রয়েছে টুইন শেয়ারিং ভিত্তিতে ডিলাক্স/স্ট্যান্ডার্ড রুম, অনুরোধে অতিরিক্ত বেড দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

 মনোরম প্রাকৃতিক ভিউ পয়েন্ট

বন ফায়ার

বারবিকিউ চিকেন

ব্যাম্বু চিকেন

অনুরোধে বিশেষ স্বাদযুক্ত হুক্কা পাওয়া যায়।

পেশাদার মাইক্রোফোন সহ জেবিএল পার্টি বক্স । অতিথিদের সন্ধ্যায় গান গাওয়ার জন্য প্রদান করা হয়।

আনলিমিটেড ওয়াই-ফাই সহ স্মার্ট টিভি সব ঘর জুড়ে এবং আপনাকে বিনোদন দেওয়ার জন্য লবিতে ইনস্টল করা বড় স্ক্রিনও রয়েছে।

যদি আপনি দীর্ঘ দিনের ভ্রমণের পরে আপনার ঘরে ফিরে আরাম করতে চান, তাহলে শুধু বসে থাকুন এবং আপনাকে অফার করার জন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা আছে…

সারেগামা কার্ভান…।

এফ এম রেডিও

তাঁবু তে থাকার ব্যবস্থা

অ্যাডভেঞ্চার

জুমারিং

মাউন্টেন ক্লাইম্বিং র‌্যাপিলিং

ভিলেজ ওয়াকিং

পাখি দেখা ইত্যাদি

যোগাযোগ

Esti Kutum Farm Stay

Subham:  9836044444/9339742847

Visit us on Facebook/ Instagram/ YouTubhttps://www.facebook.com/profile.php?id=100069336095559


Spread the love

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *