জয় শাহ আইসিসি মঞ্চে গেলে বিসিসিআইতে কে? জল্পনা

জয় শাহ আইসিসি মঞ্চে গেলে বিসিসিআইতে কে? জল্পনা
Spread the love

দীপঙ্কর গুহ / ডিজি টক

তাহলে আবার প্রমাণ হতে চলেছে, ক্রিকেট প্রশাসক হয়ে সাফল্যের চূড়ায় উঠতে গেলে প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার হওয়ার দরকার পড়ে না। জগমোহন ডালমিয়া সেরা নমুনা। এবার‌ কি জয় শাহের পালা? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ক্রিকেট প্রশাসক বনে গিয়ে এই রীতি বদলে দিতে পারতেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। তাই তাঁর বিসিসিআই রাজনীতি থেকে ধাক্কা খাওয়ার পর, বর্তমান বোর্ড সচিব জয় শাহ – ডালমিয়ার পথে এগিয়ে চলেছেন। বোর্ড সচিব পদ ছেড়ে ( কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই) জয় আইসিসির মঞ্চে উঠতে চলেছেন— বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার চেয়ারম্যান হয়ে। 

আর এমনটা এবার আগস্ট মাসে হয়ে গেলে বোর্ড সচিব পদে কে? এক বছরের জন্য কে হবেন? তিনিই কি আরও কিছু বছর টেনে দেবেন? নাকি এক বছরের জন্য কেউ দায়িত্ব সামলে দিলে ২০২৫ সালে নয়া অভিষেক?  আপাতত যাঁদের নাম সামনে চলে এসেছে বিসিসিআই সচিব পদের জন্য, সেগুলো একবার দেখে নেওয়া যাক। দৌড়ে সামিল এখনকার আইপিএল চেয়ারম্যান হিমাচল প্রদেশের অরুন ধুমাল, দিল্লির রোহন জেটলি, গুজরাটের ধানরাজ পরিমল নাথওয়ানি, ভারত জাভেরি— এমনকি বোর্ডের সহ সভাপতি রাজীব শুক্লার নামও ঢুকে পড়েছে! আর শর্তসাপেক্ষে এই বাংলার অভিষেক ডালমিয়ার  (জগমোহন ডালমিয়া পুত্র)  নামও আলোচনায় জায়গা পেয়ে গেছে।  রোহন জেটলি।

দিল্লি অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ( ডিডিসিএ) – এর শীর্ষ কর্তা। প্রয়াত বিজেপি মন্ত্রী আইনজীবী অরুণ জেটলির পুত্র। দিল্লি, রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায় নিজের যোগ্যতা আর দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কার্যকালের মধ্যে ডিডিসিএ গুরুত্ত্বপূর্ণ অনেক ম্যাচ পেয়েছে। ভালোমতন সামলেছে। একসময় ওঁর বাবা অরুণ জেটলি বোর্ডের পদ ছাড়াই ক্ষমতাবান কর্তা ছিলেন। আইনজীবী ছিলেন বলে বোর্ডের ভালো-মন্দ বিচার করে অনেক কিছু প্রশাসনিক আর সাংগঠনিক পরিবর্তনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। আজও সকলে এই মানুষটির কথা দেশের প্রথম সারির ক্রিকেট কর্তারা মনে রেখেছেন। তাঁরই ছেলে এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। স্বাভাবিকভাবেই রোহন কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেয়ে এগিয়ে। 

একই ভাবে আইপিএল চেয়ারম্যান পদে থাকা অরুণ ধূমাল এই দৌড়ে সামিল। হিমাচল প্রদেশের নানান ইস্যু তিনি যেভাবে সামাল দিয়ে চলেছেন, তাতে এটা প্রমাণিত – তিনি একজন চোস্ত প্রশাসক। ছিলেন বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যখন বোর্ড সভাপতি, তখন জয় শাহ – ধুমালকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল – থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। 

রাজ্যের রাজনৈতিক সাফল্যে অরুণ এক বড় কুশীলব বিজেপির। প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের ভাই। ফলে ধুমালের বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ অনেক জোরদার। এই ক্রিকেট কর্তাটি যদি জয় শাহের এক বছরের কাজ সারতে বোর্ড সচিব হন – তাহলে এটা নিশ্চিত, তিনিই পরের গোটা একটা টার্ম বোর্ড সচিব হয়ে সামলাবেন।এই এক বছরের দায়িত্ব সামলানোর দায়িত্বে অনিরুদ্ধ চৌধুরীর নাম। বাবা রণবীর সিং মহেন্দ্র একসময় বোর্ডের নানান প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলেছেন। এবার হরিয়ানা থেকে তাঁর নাম ভেসে রয়েছে।  আর আছেন জয় শাহের সাথী গুজরাত ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ধনরাজ পরিমল নাথওয়ানী। গোটা দেশে তাঁর অন্য পরিচিতি আছে – বড় ব্যবসায়ী রূপে। রাজ্যে ক্রিকেট সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তিনি। ধনরাজের একটাই সমস্যা – তিনি এখনকার বোর্ড সচিবের রাজ্যের কর্তা। বোর্ড একই রাজ্যের দিকে ঝুঁকে ( গুজরাত) থাকবে বলে মনে হয় না। কিন্তু, একটি বছরের জন্য তিনিও ঢুকে আছেন শর্ট লিস্টে। 

বোর্ডের মধ্যে আবার অনেকে মনে করছেন, জয় শাহের উচিত ভারতীয় বোর্ডেই থাকা। এত কম বয়স, আইসিসি
চেয়ারম্যান না হয়ে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করা ভালো। এই মুহূর্তে তিনি এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিলের সর্বময় কর্তা। অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছেন, নিজে না গিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিসিসিআই থেকে আইসিসি চেয়ারম্যান পদের জন্য পাঠাতে।  কিন্তু বোর্ড রাজনীতির পোড়খাওয়া কর্তারা বলছেন, যা আসছে সুযোগ তা দুহাতে জাপটে ধরাই ভালো। রাজনীতির অংকে বিজেপি আর আগের মতো দাপাদাপি দেখাতে পারছে না। তাই পরে বিজেপি কর্তা অমিত শাহের ছেলে জয় আর ক্ষমতায় নাও ফিরতে পারেন, তাহলে বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থার এমন সম্মান হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই একবছর পর ৩ বছরের কুলিং অফ পিরিয়ডে চলে যাওয়ার চেয়ে, এক বছর বাকি থাকতে আইসিসি চেয়ারম্যান হয়ে বসাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আইসিসি চেয়ারম্যান পদে ভারতের কেউ বসলে বিশ্ব ক্রিকেটে যেমন ভালো, তেমনি ভালো ভারতীয় ক্রিকেটেও। এই সবের মাঝে আবার ভেসে উঠেছে জগমোহন ডালমিয়ার ছেলে অভিষেক ডালমিয়ার নাম। এই মুহূর্তে তিনি রাজ্যের সংস্থায় কুলিং অফ পিরিয়ড দিয়ে চলছেন। যদিও তারই মাঝে ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাবের (বাংলার আরও এক অ্যাসোসিয়েট মেম্বার) হয়ে বোর্ডের আইপিএল কমিটির সদস্য হয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছেন। যদি সিএবি একবছরের জন্য তাঁকে বোর্ডের বার্ষিক সভায় পাঠায় ( যে সম্ভাবনা কম) তাহলে, এক বছরের জন্য বোর্ড সচিব হয়ে যেতে পারেন অভিষেক। যতো দূর এই উঠতি – প্রতিভাবান ক্রীড়া প্রশাসককে দেখেছি, তাতে মনে হচ্ছে – এক বছরের জন্য এই দায়িত্বে নিজেকে টেনে নিয়ে যাবেন না । বরঞ্চ, ২০২৫ সালে কুলিং অফ পর্ব শেষ করে সংস্থার ( সিএবি) পদে ফিরে এসে  পরেই স্বয়ং আসতে চাইবেন বিসিসিআইতে। আপাতত এই হল হাল হকিকত।


Spread the love

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *