হৃদয় বলছে স্পেন কিন্তু ইংল্যান্ড… ইয়ামালের হাতে ট্রফি দেখতে চায় বিশ্ব

হৃদয় বলছে স্পেন কিন্তু ইংল্যান্ড…    ইয়ামালের হাতে ট্রফি দেখতে চায় বিশ্ব
Spread the love

সুস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায়

‘ওই বাচ্চা ছেলেটা কাপ জিতবে তো ?’
প্রশ্নটা এক অতীব সাদামাটা গৃহবধূর বা বলা ভাল এখন ঠাকুমা-দিদিমা হওয়ার দিকে চলে যাওয়া মহিলার। হয়ত ফুটবল ভালোবাসেন। বা হয়ত কাজের ফাঁকে এঘর-ওঘর করতে গিয়ে টিভির পর্দায় চোখে আটকে গেছে। তখনই নজর পড়েছে ‘ওই বাচ্চা’টার দিকে। আর তিনি লামিনে ইয়ামাল, এই সাদামাটা বঙ্গ গৃহবধূই নয়, হৃদয় জিতে নিয়েছেন সারা বিশ্বের বাঘা বাঘা ফুটবল বিশেষজ্ঞরও। শুধু তিনিই নন, তাঁর দল এবারের ইউরো জিতুক, এটাই এখন প্রার্থনা ফুটবল-ভক্তদের। কিন্তু সবসময় হৃদয়ই কি সঠিক কথা বলে? নাকি অঙ্ক অন্যকিছু বলছে? এই প্রশ্নটাও কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে ইউরো ফাইনালের আগে, গত কয়েকদিন ধরে।

এবার দেখে নেওয়া যাক, পুরো টুর্নামেন্টে দুই দলের পারফরমেন্স কিরকম ছিল। স্পেন প্রথম ম্যাচেই ক্রোয়েশিয়াকে তিন গোল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়, কতটা তৈরি হয়ে এসেছে এবার। তারপর থেকে গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই চলেছে স্প্যানিশ আর্মাদার দাপট। দু’একটা ম্যাচে বিচ্ছিন্নভাবে খারাপ হলেও এই স্পেন যে এবার অনেকদূর যেতে পারে, এটা বারবারই
বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১২ ইউরোর পর আবার আশা জাগাচ্ছেন রড্রি, আলভারো মোরাতা, ওলমো, নিকো উইলিয়াম বা ইয়ামালদের মত তরুণরা। যদিও চোট পেয়ে পেদ্রির ছিটকে যাওয়াটা দুঃখজনক। তবে তাতে যে বিন্দুমাত্র কমেনি স্পেনের দাপট, সেটা কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানী এবং সেমিতে ফ্রান্সের মত শক্তিশালী দুই দলকে হারানোতেই পরিস্কার। লুই দে লা ফুয়েন্তের দল এবার সবুজ মাঠে পায়ের জাদু-আলপনায় মনে করিয়ে দিচ্ছেন সেই জাভি-ইনিয়েস্তা-বুসকেটদের স্পেনকে। শনিবার ছিল

ইয়ামালের জন্মদিন। ১৭-তে পা দিয়ে এই কিশোরের কথাবার্তা একেবারেই বড়দের মত। তিনি মা’কে বলে দিয়েছেন, ‘আমার অন্য কোনওপহার নয়, কাপটাই চাই। মাদ্রিদে ফিরে তোমাদের সঙ্গে উৎসব করব।’ সেখানে ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম ম্যাচে জুডে বেলিংহ্যাম সাড়া জাগালেও টুর্নামেন্ট এগনোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ ফিকে হয়েছে গ্যারেথ সাউথগেটের দলের পারফরমেন্স। হ্যারি কেন ও ফিল ফোডেনের পারফরমেন্স তো রীতিমত আতশ কাঁচের তলায় ফেলছেন ইংরেজ বিশেষজ্ঞরা। এখনও পর্যন্ত ইংল্যান্ড অধিনায়ক একেবারেই ছন্দে নেই। যদিও তাঁর জন্যই ইংল্যান্ড হয়ত সেমিফাইনালে। কেনের অভিনয়ের ফাঁদে পরেই নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে পেনাল্টি দেন রেফারি। অনেকে তো সেদিনের পর বলতে শুরু করেছেন, উয়েফা এবার ইংল্যান্ডকেই কাপটা দিতে চায়। গতবারের ফাইনালে হারের দুঃখ তাই এবারই ভুলবেন কেনরা। ফোডেনকে যেভাবে সাউথগেট ব্যবহার করছেন, তাতে ম্যান সিটি
তারকা নিজের সেরা ছন্দ সম্ভবত খুঁজে পাচ্ছেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। ইংল্যান্ড কোচ অবশ্য নিজেদের উপর থেকে চাপটা চালান করে দিতে চাইছেন প্রতিপক্ষের উপর। তাই ‘স্পেনই ফেভারিট’ এরকম বাক্য শোনা গেছে তাঁর মুখে। তিনি যাই বলুন না কেন! অনেকেই মজা করে মন্তব্য করছেন, সাউথগেটের যা কপাল চলছে তাতে ইউরোপ সেরার শিরোপা মাথায় উঠলে না তাঁকে প্রধানমন্ত্রী-টন্ত্রী করে দেওয়া হয়! ফুয়েন্তের কাছে চ্যালেঞ্জটা অবশ্য সম্পূর্ণ অন্যরকম। তিনি ২০২৬ বিশ্বকাপের দলটাকে তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছেন। কোথায় ফাঁকফোকর আছে, তা দেখে নেওয়ার
জন্য এর থেকে ভাল মঞ্চ তিনি আর পাবেন না। তাছাড়া ইউরো কাপটা পেয়ে গেলে এই স্পেনের এই তরুন প্রজন্ম হারানো আত্মবিশ্বাসটাও ফিরে পাবে। একই কথা অবশ্য প্রযোজ্য ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রেও। তাদের কাছে ১৯৬৬ সালের পর গুরুত্বপূর্ণ কোনও ট্রফি জেতার আবারও একটা সুযোগ এসেছে। ৫৮ বছরের এই লম্বা ট্রফি খরা কাটাতে এবারের থেকে বড় সুযোগ হয়ত আর আসবেই না তাদের কাছে।

রবিবাসরীয় বার্লিনের রাত তাই কাদের জন্য সুখের পসরা সাজিয়ে বসে আছে, তার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে। তবে ওই যে! সেই গৃহবধূর মত, হয়ত সারা পৃথিবীই প্রার্থনায় ইয়ামালের-ট্রফি জয়। এমনকি বিশ্ব- নিন্দুক ইংল্যান্ড প্রচারমাধ্যমও কেন যেন এই কিশোরের মায়ায় জড়িয়েছে। তাই হয়ত স্পেন জিতলে হারের পরও এই প্রথমবার জিতে যাবে ইংল্যান্ডও। আর তা না হলে, আরও বছর দুয়েক অপেক্ষা করতে হবে এক কিশোর তারকার আবারও একবার দাপুটে ফুটবল দেখার জন্য।


Spread the love

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *