দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না

দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না
Spread the love

সুপ্রিয় ঠাকুর, প্রবীণতম আশ্রমিক, শান্তিনিকেতন

বড়ই হতাশ লাগে শান্তিনিকেতনকে দেখে। ছোটবেলা বললে ভুল হবে। জন্ম থেকেই শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেছি। যে পাঠভবনে একদিন পড়েছি, সেখানে পরে আমি অধ্যক্ষ হয়েছিলাম। কিন্তু সেদিনের শান্তিনিকেতন ও আজকের শান্তিনিকেতন দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। রাজনীতি সবসময় ছিল। কিন্তু তখন শান্তিনিকেতনে বা বিশ্বভারতীতে রাজনীতির প্রবেশ হয়নি। অনেক স্বনামধন্য উপাচার্য এসেছেন। কিন্তু বিগত দিনে যে উপাচার্য ছিলেন, তিনি শান্তিনিকেতনের পরিবেশ সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিয়েছেন। তাছাড়া কবিগুরু যে লক্ষ্য নিয়ে শান্তিনিকেতন করেছিলেন, তা আজ নেই। খোলামেলা শান্তির পরিবেশ, আজ দমবন্ধ হয়ে আসে। চারিদিকে প্রচীর। নানা বিধিনিষেধ। কেন এটা হবে? গুরুদেব কি এটা চেয়েছিলেন? এই মুহূর্তে আমি প্রবীণ আশ্রমিক। সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মারা যাওয়ার পর আমার চেয়ে বয়সে বড় কেউ নেই।

শান্তিনিকেতনে গুরুদেবের কোলে লেখক (সুপ্রিয় ঠাকুর)

আমি শান্তিনিকেতনকে অনেকদিন ধরে দেখছি। কিন্তু আজ বড়ই বেমানান লাগছে। আমি তখন খুব ছোট। শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করি। তখনকার এক প্রবীণ আশ্রমিক আমাদের সঙ্গে রোজ খেলা করতেন। তখন প্রত্যেকে প্রত্যেককে চিনতেন, জানতেন। যেন শান্তিনিকেতনের সকলে সকলের আত্মীয়। কিন্তু এখন অধিকাংশজন কেউ কাউকে চেনে না। পৌষ মেলা ও বসন্তোৎসব গুরুদেব অনেক ভাবনাচিন্তা করে শুরু করেছিলেন। তা পরিচিত হয়েছিল বিশ্বব্যাপী। কিন্তু তা বন্ধ হয়ে গেল। এই এলাকায় প্রচুর মানুষ হাতের কাজের সম্ভার নিয়ে পৌষ মেলায় বিক্রি করতে আসছেন। তাতে এই গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষগুলি কিছু উপার্জন করতে পারতেন। এইভাবেই চলছিল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন এখানে তাঁদের সামগ্রী বিক্রি করতে আসতেন। এছাড়া বিশ্বভারতীতে বসন্তোৎসবেরও একটি রীতি গুরুদেব করে গিয়েছিলেন। সকালে “ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল” গান দিয়ে শুরু হত উৎসব। সব গানের শেষে “রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাওগো এবার যাওয়ার আগে” গাওয়া হত। তখনই আবির খেলা শুরু হত। তারপর কালোবাড়ি, আম্রকুঞ্জে আমাদের আড্ডা বসত। মাঝে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়ায় তা অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বড্ড কষ্ট হয় এই শান্তিনিকেতন দেখে।


Spread the love

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *