অমিত মিত্রর প্রতিবেদন
চিত্রকল্পের সঙ্গে সামান্য কথকতার যুগলবন্দীতে শতাধিক বাঙালি চিকিৎসকের কাজের রূপরেখা তুলে ধরার এ এক অভিনব প্রয়াস। ২২ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ, কলকাতার গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায় হয়ে গেল এই প্রদর্শনী। “একশো তারার আলো” -নামের মধ্যেই শতাধিক আলোকিত মহাজীবনের আভাস। উনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলায় জন্ম নেওয়া চিকিৎসাব্রতীরা এই প্রদর্শনীর উপজীব্য।
“পেশাগত অবদানের বাইরে ব্যাপকতর সমাজজীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁরা যেভাবে উজানে নৌকা বেয়েছেন, তা জেনে চিকিৎসক হতে চলা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অবশ্যই প্রেরণা পাবেন। বর্তমান প্রজন্ম পাবেন গর্বিত উত্তরাধিকারের উষ্ণতার স্পর্শ।” -বললেন এই অভূতপূর্ব প্রয়াসের কারিগর ডাঃ সুগত দাশগুপ্ত। পেশায় তিনিও চিকিৎসক। এসএসকেএম -এর ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন -এর প্রফেসর, ডাক্তার সুগত দাশগুপ্তর বরাবরের শখ ছবি আঁকায়। মূলত স্কেচ।
২০২২ সালে লিভার ফাউন্ডেশন দ্বারা সংকলিত এবং প্রকাশিত “একশো তারার আলো” গ্রন্থের সম্পাদক ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরী। সেই বইতে উঠে আসা শতাধিক বরেণ্য বাঙালি চিকিৎসকের স্কেচ নিজের ভাবনায় প্রকাশ করেছেন ডাঃ সুগত দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়- এই ছবিগুলি প্রতিকৃতি নয়। অবিকল প্রতিকৃতি নির্মাণ কখনই উদ্দেশ্য ছিল না। বরং কার্টুন এবং আরও অন্যান্য ফর্মের মিশেলে একটি গল্প বলার চেষ্টাই এই আঁকার মূল সুর। সেই গল্প বলার খাতিরে মাঝেমাঝেই ব্যবহৃত হয়েছে বাঙালি জীবনের সঙ্গে জুড়ে থাকা কিছু চিরায়ত মোটিফ।
এই প্রদর্শনীতে ধরা সময়কাল দুই শতাব্দীর উপর বিস্তৃত। দুশো বছরের অনেকটা সময় জুড়েই বাংলা তথা কলকাতা ভারতের রাজধানী ছিল। কাজেই এই প্রদর্শনীতে ভাস্বর চিকিৎসক-মহাজীবনদের পেশাগত এবং সামাজিক প্রভাব শুধুমাত্র বাংলায় সীমাবদ্ধ ছিল না। গোটা দেশের চিকিৎসার আকাশেও এঁরা উজ্জ্বল এক এক জন জ্যোতিষ্ক।
এমন এক প্রদর্শনীর পিছনে যে শ্রম, সময় দিতে হয়েছে সে কথা বলতে গিয়ে ডাঃ সুগত দাশগুপ্ত আবেগতারিত হয়ে দুজনের নাম আনলেন। তাঁর দশ বছরের যমজ পুত্র-কন্যা। প্রধী আর প্রমা। এমন এক প্রদর্শনী আরও বেশি করে সবার কাছে নিয়ে যেতে আগ্রহী সুগত বাবু।
অগ্রজপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবেই হোক কিংবা আগুন ছুঁয়ে স্যাঁতসেঁতে প্রাত্যহিক জীবনে উত্তাপ আনার চেষ্টাই হোক, হোক না এটা আলোর পথ খোঁজার একটা ছোট্ট উদ্যোগ! “একশো তারার আলো”, আলো ফেলুক বাংলা তথা দেশের আগামী চিকিৎসক প্রজন্মের পথ চলায়। ডাঃ সুগত দাশগুপ্তর মতো, আমাদের সকলের আশা থাকুক এটাই।
ডঃ সুগত দাশগুপ্তর স্কেচে আরও কয়েকটি মহাজীবনের চিত্রকৃতি-