নেদারল্যান্ডস থেকে লেখা ও ছবি- ত্রিপর্ণা ঘোষ দে
আগে একবার বেশ কিছুদিন কাটিয়ে গিয়েছি এদেশে। স্বামীর চাকরি তথ্য প্রযুক্তি সেক্টরে। সেই সুবাদেই নেদারল্যান্ডসে আসা। তখন আমরা দু’টিতে মূলত হইচই আর আনন্দ করেই কাটিয়েছি সবার সঙ্গে। মাঝে ফিরে গিয়েছিলাম কলকাতায়। ফের এদেশেই আসা চাকরিসূত্রে। তবে এবার ব্যাপারটা একটু আলাদা। কারণ, এবার আর দুই নয়, তৃতীয় জন এসেছে আমাদের জীবনে। সেই ছোট্ট জিয়াকে নিয়ে এদেশে আসার আগে অনেক চিন্তা ভিড় করেছিল মাথার মধ্যে। মেয়েকে পড়াব কোথায়? সেদেশের জলবায়ু, ডাচ ভাষী বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ও মানিয়ে নিতে পারবে তো? বাংলায় আমরা আজকাল ছোট থেকেই স্কুলে পাঠাই অভ্যাস তৈরির জন্য। সেইসঙ্গে ভাল স্কুলে ভর্তির জন্য তৈরি করানোও একটা উদ্দেশ্য থাকে বইকি। প্রি স্কুলকে ডাচ ভাষায় Peuterspeelzaal বলা হয়। দেড় থেকে দু’ বছরের মধ্যেই স্কুলজীবন শুরু হয়ে যায়। প্রি স্কুল অবশ্য বাধ্যতামূলক নয়। বাবা-মায়েরা চাইলে এই স্কুলে বাচ্চাদেরকে ভর্তি করতে পারেন। এই স্কুল মূলত বাচ্চাদের প্রাইমারি স্কুলের জন্য তৈরি করে এবং ডাচ ভাষা শিখতে সাহায্য করে। কিন্তু সম্পূর্ণ শিক্ষাটাই হয় খেলার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন ধরনের কাজকর্মের মাধ্যমে। স্কুল কিন্তু রোজ হয় না। সপ্তাহে দুই থেকে পাঁচ দিন হয়। স্কুল বাছাইয়ের জন্য একটি অ্যাপ আছে। তার নাম স্কুল ওয়াইজার। এই অ্যাপটি সরকার দ্বারা পরিচালিত। প্রথমে অ্যাপে আমাদের রেজিস্টার করতে হয় বাচ্চাদের নাম। সেই সঙ্গে পছন্দের স্কুলের ক্রমিক তালিকাও জানিয়ে দিতে হয় অ্যাপ মারফত। তারপর সরকার থেকে চিঠি আসে স্কুল দেখতে যাওয়ার জন্য। এই ব্যাপারটা দারুণ।
সংশ্লিষ্ট স্কুলে গেলে কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা বা প্রিন্সিপাল পুরো স্কুলটা ঘুরিয়ে দেখান। শুধু তাই নয়, সেখানে বাচ্চাদের পঠনপাঠনের সম্পূর্ণ পদ্ধতিই বাবা- মায়েদের ব্যখ্যা করেন তাঁরা। বাবা-মা ও স্কুল কর্তৃপক্ষ উভয়ের পছন্দ অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকায় নাম ওঠে। বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয়, আপনরা চাইলে আপনার বাচ্চাকে অমুক স্কুলে ভর্তি করতে পারেন। চার বছর অবধি বাচ্চা প্রি স্কুলেই যায়। তার পর থেকে শুরু হয়ে যায় প্রাথমিক স্তর। আমার মেয়ে এখন চার দিন স্কুলে যায়। সেখানে যত না পড়া হয়, তার চেয়ে বেশি হয় খেলাধূলা। তার পাশাপাশি ছবি আঁকার ক্লাস হয়। বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজও শেখানো হয়। তাছাড়া বাচ্চাদের গল্প বলা হয়। ডাচ ভাষায় সংখ্যা ও একেবারে ভিত তৈরির জন্য সামান্য কিছু বুনিয়াদি পড়াশোনা করানো হয়। প্রকৃতির ওপর ভালবাসা তৈরি করার জন্য শেখানো হয় প্রকৃতি পরিচর্যাও। বাগান পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে শামুকের দেখভাল, বাদ যায় না কিছুই। বাচ্চারা স্কুলের অর্ধেক সময়ই ক্লাসরুমের বাইরে খেলে প্রকৃতির সঙ্গে। আমার মেয়ে তো সাইকেল চালানো পর্যন্ত শিখেছে স্কুলেই। স্কুলের শেষে সব বাচ্চাদের নিজের ক্লাসরুম সাফাই করতে হয়। খেলনা সহ অ্যাক্টিভিটির সব জিনিস স্টোর রুমে গুছিয়ে রেখে আসতে হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সাহায্য করার জন্য। এতে বাচ্চারা সাবলম্বী হতে শেখে।
একটা বিষয়ে আমি প্রথমে খুব চিন্তায় ছিলাম। শীতকালে হাড়কাঁপানো মাইনাস ঠান্ডায় আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে কি না তা নিয়ে আমার উদ্বেগের অন্ত ছিল না। স্নোফল বা বৃষ্টি হলেও এরা বাচ্চাদের বাইরে খেলতে বের করেন। শিক্ষকরা মনে করেন, এভাবেই বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। আমার প্রথম পেরেন্ট-টিচার্স মিটিংয়ে আমি মেয়ের ডাচ শেখা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলাম। আমি নিজেই তো ডাচ জানি না। আমি বাড়িতে ওকে পড়াব কী করে? টিচার আমাকে নিশ্চিন্ত করে বললেন, আপনার মেয়ে যদি নিজের মাতৃভাষায় স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারে তাহলে যে কোন ভাষা ও খুব সহজে শিখে যাবে। আপনি মেয়ের সঙ্গে মাতূভাষাতেই কথা বলবেন। ডাচ ভাষা শেখানোর দায়িত্ব আমাদের। এখন আমি বুঝতে পারি এই ধরনের চাপহীন অন্য মানসিকতার শিক্ষা ছেলেমেয়েদের বড় হতে কতটা সাহায্য করে। প্রি-স্কুল শেষে প্রতিটি শিশুর অগ্রগতির খতিয়ান নেওয়া হয়। তার পড়াশোনা বা আচার- আচরণ কতটা এগলো তা দেখা হয়। তার ভাষা থেকে শারীরিক বৃদ্ধি কিছুই বাদ যায় না।
পরবর্তী ধাপ বুনিয়াদি স্কুল। সেখানে জমা দেওয়ার জন্য এই অ্যাসেসমেন্ট বা লিখিত খতিয়ান বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, সেখানেই তাঁরা দায় সেরে ফেলেন না। পরবর্তী ধাপের ক্লাস টিচারের সঙ্গে নিজে ফোনে কথা বলেন বাবা-মায়ের সামনেই। শিশুটিকে তিনি এতদিন ধরে যেভাবে খুঁটিয়ে দেখেছেন, তার সবটা জানান ক্লাস টিচারকে। তার হাসি-কান্না, ইচ্ছে-অনিচ্ছে, পছন্দ-অপছন্দ যেভাবে তিনি বর্ণনা করেন তাতে অনেক সময় বাবা-মায়েরাও হাঁ হয়ে যান। মনে হয়, কই, আমরা তো এত খেয়াল করিনি! পরবর্তী ধাপের ক্লাস টিচাররাও শিশুটি সম্পর্কে আগেভাগেই সবটা জেনে যান। যেভাবে এখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকারা শিশুদের প্রতিটি অনুভূতির খবর রাখেন ও তাকে মর্যাদা দেন এটা আমার কাছে বিস্ময়ের। কারণ, আমাদের দেশে এমনটা দেখিনি।
Asadharon lekha. Netherlands er pre-school samporke Ekta sundar dharna holo. Amar natni ekhon Jane okhane thakurda o thakumake Opa r Oma bole date. O bole here goriye jay.. Ekhanei Bangali namaste sarthokata.
Netherlands er pre-school really khub bhalo.Ora pratham thekei manus toirir kaaj Shura kore deay. Amar natnir school theke pratidin 2to photo pathay oder school activities er chhabi.Gymnnasium , indoor games sab achhe. Dutch bhavan o Shikha jachchhe. Oder bhavan dadu dida ke Opa Omaa bole, aamar national phone bole r hase. Lekhata khub Pranjal.
সুন্দর লেখনী…কলকাতা তে বসে নেদারল্যান্ড এর প্রি-স্কুল এর পরিবেশ,ওখানকার শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের প্রতি যত্নশীল মানসিকতা,ইতিবাচক আচরণ এর সাথে কর্তব্যপরায়নতা এই সব টা সুন্দর ভাবে অনুভব করা যাচ্ছে এই লেখনীর মধ্যে দিয়ে।ভবিষ্যতে আমরা এই ধরনের আরো নিবন্ধ দেখতে চাই।