রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প এবং অচর্চিত ‘লিপিকা’

রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প এবং অচর্চিত ‘লিপিকা’
Spread the love

লিখেছেন কৃষ্ণ শর্বরী দাশগুপ্ত

প্রথম পর্ব

যেখানে মানুষ সেখানেই গল্প। গল্প থাকে চরাচর জুড়ে। মানুষ যেন তার লাটাই, যার পরতে পরতে জমতে থাকে গল্পের সুতো, আর সেই সুতোকে বাড়িয়ে কমিয়ে জীবন ঘুড়িকে অনন্তে ভাসিয়ে রাখেন কে এক অদৃশ্য কথক। এ গল্প ছোট, বড়, মাঝারি, যেমন খুশি হতে পারে — চাই কি হয়ে উঠতে পারে আস্ত একখানা উপন্যাস। তবে সব গল্প যেমন পাঠকের সমান ভালো লাগেনা, তেমনি সব জীবনের থোড়-বড়ি-খাড়াতেও আবার কাহিনীর সেই চুম্বক টানটি থাকেনা। সামনে দিয়ে যাত্রীবোঝাই গাড়ি যেতে দেখলে কখনও কখনও কেমন মনে হয়, এক গাড়ি গল্প যেন যাত্রা করেছে কোন নিরুদ্দেশে। প্রত্যেকটা মানুষই যে এক একটা গল্পের আকর। তার বেশিটাই হারিয়ে যায়, দলছুট একটি দুটি হয়ত বীজ থেকে বৃক্ষ কি নিদেন চারাগাছটি হয়ে ওঠে  — হয়ত চরিত্র হয়ে আমরাও কখনও ঢুকে পড়ি তার জঙ্গম শরীরে। তাই গল্পকার জীবন থেকে তাঁর গল্পের রসদ সংগ্রহ করেন, কবিতার ক্ষেত্রে যে রসদ অনেকটাই সঞ্চিত থাকে বহিরঙ্গে নয়, কবিরই মনের গহীনে।  ব্যক্তিমনের নিজস্বতার ছায়া পড়ে বলেই বোধহয় আম পাঠক সব কবির সব কবিতার সঙ্গে সবসময়ে একাত্ম হতে পারেন না, তুলনায় গল্পগুলিকে তিনি সহজে চিনতে পারেন। শুরুর দিকে মহাকাব্য, পুরাণ  বা লোককথার বিস্তার আর ধারাবাহিকতা ছেড়ে কাহিনীসূত্র যখন বিশেষ একটি বিষয়ভাবনা বা চরিত্রের মুখে আলো ফেলল, গল্পের আয়তন হয়ে এল সংক্ষিপ্ত, আবেদন আরও তীক্ষ্ণ।  সাহিত্যে  জনপ্রিয় এই ছোটগল্পের ধারাটির সূত্রপাত ইউরোপে হলেও বাংলার সজল মাটিতে তার পল্লবিত হতে সময় বেশি লাগেনি, আর সূচনালগ্নে এই ‘ফর্ম’টিকে নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

‘ জল পড়ে পাতা নড়ে’-র  সোনার কাঠি আদতে বালক রবীন্দ্রনাথের মধ্যে তাঁর কবিসত্ত্বাটিকেই জাগিয়ে তুলেছিল।  যখন তাঁর বয়স ষোল বছর, তখন ‘ভারতী’ পত্রিকার র জন্য সম্পাদক, বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথের হাতে জমা দিয়েছিলেন তাঁর লেখা প্রথম গল্প  ‘ভিখারিণী’। সেটা বাংলা ১২৮৪ (ইং ১৮৭৭) সাল। এরপর দীর্ঘ সাত বছরের বিরতি। ১২৯১তে আবার কার্তিক, অগ্রহায়ণ পরপর দু’মাসে ‘ভারতী’তেই প্রকাশিত হল ‘ঘাটের কথা’, ‘রাজপথের কথা।’ তবে প্রকৃত অর্থে গদ্য সাহিত্যের নতুন এই শাখাটি রবীন্দ্র প্রসাদগুণে পুষ্ট হতে শুরু করে ১২৯৮ ( ইং ১৮৯১) থেকে, যখন ‘সাপ্তাহিক হিতবাদী’তে প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিত হচ্ছে  তাঁর ‘দেনাপাওনা’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘গিন্নি’, ‘রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা’, ‘তারাপ্রসন্নর কীর্তি’-র মতো বিখ্যাত সব গল্প। জমিদারি দেখাশোনার কাজে এই সময় থেকেই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ তাঁর এই সাহিত্যসেবী পুত্রটিকে পাঠাতে শুরু করেছিলেন শিলাইদহে।  প্রথমে আপত্তি থাকলেও ক্রমশ জনসংযোগের এই দায়িত্ব তাঁকে সাধারণ পল্লীজীবনের খুব কাছাকাছি এনে দিল এবং কবির সংবেদী মন জীবন থেকে আহরণ করে নিতে লাগলো মুঠো মুঠো গল্পের রসদ। এই গল্প লেখার কাজটিতে তিনি যে মগ্ন হতে পেরেছিলেন, ১৮৯৪তে ভাইঝি ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠিতে তারই প্রতিফলন — ‘ আজকাল মনে হচ্ছে যদি আমি আর কিছু না করে ছোট ছোট গল্প লিখতে বসি তাহলে কতকটা মনের সুখে থাকি এবং কৃতকার্য হতে পারলে হয়তো পাঁচজন পাঠকেরও মনের সুখের কারণ হওয়া যায়। গল্প লেখার একটা সুখ এই, যাদের কথা লিখব তারা আমার দিনরাত্রির অবসর একেবারে ভরে রেখে দেবে, আমার একলা মনের সঙ্গী হবে, বর্ষার সময় আমার বদ্ধ ঘরের সংকীর্ণতা দূর করবে, এবং রৌদ্রের সময় পদ্মাতীরের উজ্জ্বল দৃশ্যের মধ্যে আমার চোখের পরে বেড়িয়ে বেড়াবে।’ তিনি ভাবলেন বটে গল্প লিখে ‘পাঁচজন পাঠকের মনের সুখের কারণ হওয়া যাবে’, কিন্তু তাঁর সম্পাদক পড়লেন দ্বিধায়। রবীন্দ্রনাথের গল্প নিয়ে হিতবাদীর সম্পাদক কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্যের এই খুতঁখুতের কথা অনেক পরে কবি নিজেই বলেছেন রানী চন্দকে –‘আমাদের এডিটর কৃষ্ণকমল–তিনি বললেন,”দেখো রবি, তুমি যা লিখছ, একি সবাই বুঝতে পারে। আমরা যাদের নিয়ে কারবার করছি, এরা  কি কিছু বুঝবে। এ যে high class literature.” রবীন্দ্রনাথের আত্মশ্লাঘায় লেগেছিল সেদিন। তাঁর মনে হয়েছিল, হয়ত বঙ্কিমী রোমান্স কম থাকার জন্যেই তাঁর লেখা সমাদৃত হচ্ছেনা। অনেকে বললেন, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছেন রবীন্দ্রনাথ, ধনীর ছেলের সাধ্য কি সাধারণ মানুষের জীবনের ছবি আঁকেন ? একথায় খুব দুঃখ পেয়েছিলেন কবি। তাঁর গল্পগুচ্ছের পাতায় পাতায় গ্রামবাংলার যে অনাড়ম্বর পল্লীজীবনের ছবি, তা-ই হয়ে থাকল জমিদারপুত্রের সাধারণ শ্রমজীবী, কৃষিজীবী মানুষের সঙ্গে যোগসূত্রের অন্তরঙ্গ দলিল।

‘হিতবাদী’তে লেখা বন্ধ করলেও গল্প লেখা তাঁর চলতেই থাকল, নিজস্ব ধাঁচে। ‘সাধনা’ পত্রিকায় ওই ১২৯৮তেই ছাপা হল ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’। এরপর যে চার বছর চলেছিল ‘সাধনা’, তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের মোট পঁচিশটি গল্প ছাপা হয় তাতে। তাছাড়াও ‘প্রবাসী’, ‘মানসী ও মর্মবাণী’, ‘আগমনী’,’শান্তিনিকেতন’, পরবর্তীকালে ‘সবুজপত্র’ — এমন আরও বহু পত্রিকা তখন হাত বাড়িয়ে আছে গল্পের ক্ষিদে নিয়ে। যা দেখে মনে হয় সম্পাদক কৃষ্ণকমলের উপলব্ধিতে কোথাও বুঝি একটু খামতি ছিল, কবির লেখায় কাহিনীর সহজ আবেদনটি তাঁর চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। সর্বযুগে সমাদৃত সেই গল্পকথার পশ্চাদ্পটে দুলতে থাকা অনুভূতির পর্দাতেই তাঁর দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে, যা হয়ত চট করে সাধারণ পাঠকের বুদ্ধিগোচর হবেনা, অথচ এই সূক্ষ্মতাটুকুই  রবীন্দ্র সাহিত্যকে দেয় স্বাতন্ত্র্যের সিলমোহর। যেমন ‘ছুটি’ গল্পে গ্রামের দুষ্টু ছেলে ফটিকের শহরে মামারবাড়িতে আসা, তার অনাদর আর অকালমৃত্যু যে পাঠককে কাঁদায়, তিনি হয়ত প্রথম পাঠে ছিন্নমূল বালকের মর্মবেদনাটি টের পাননা, কিন্তু তাতে গল্পের রসগ্রহণে  তাঁর কোন বাধা ঘটেনা, উপরন্তু পরবর্তী পাঠে হয়ত তাঁরও  উত্তরণ ঘটে সেই স্তরে, যেখানে স্কুলের জানলা দিয়ে ফটিকের ছাদ দেখার হাহাকারটুকু বইয়ের পাতায় আর লেখা থাকেনা, শুধু অনুভব করতে হয়। 

‘নষ্টনীড়’ গল্পের শেষ অংশে ভূপতি চারুলতাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে মহিশূরে কোন কাগজের সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে। সে অবিশ্বস্ত স্ত্রীর ভারমুক্ত হতে চায়। এদিকে চারুও প্রাণপণে পালাতে চায় অমলের বিচ্ছেদস্মৃতি থেকে। হয়ত ভূপতিকে পুরোপুরি ছাড়তেও তার বাধে। সে ভূপতির হাত চেপে ধরে। ভূপতি চারুর হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে যায় । এ প্রত্যাখ্যানে চারুর মুখ রক্তশূন্য হয়ে যায়। ভূপতির কোমল মনটি তাতেও ব্যথা পায়, আর্দ্র হয়ে পড়ে। সব কাঠিন্য ত্যাগ করে সে বলে, “চলো চারু, আমার সঙ্গেই চলো।” গল্প শেষ হয় চারুর সংক্ষিপ্ত উচ্চারণে, –“না, থাক।” দুটি সংলাপ পরপর আসে। কিন্তু তার মাঝে থেকে যায় এক  দুস্তর ব্যবধান। অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, প্রেম-অপ্রেমের অদৃশ্য অভিঘাত– সেটুকু গল্পকার লিখে দেননা, ছেড়ে দেন পাঠকের জন্যে –রেখে দেন তার ভাবার অবকাশ। এখানেই আর পাঁচজন লেখকের চেয়ে রবীন্দ্রনাথ আলাদা। বাংলা ছোটগল্পের যিনি পিতৃপ্রতিম, ভাষাকে গড়তে গড়তে যিনি লেখেন, লিখতে লিখতে গড়েন। পাশ্চাত্যের লেখকদের মতো একটি তৈরি ভাষা যিনি পাননি, সাধু ভাষা, মিশ্র ভাষাকে সাধারণ মানুষের  মুখের ভাষায় ধীরে ধীরে বদলে নিতে হয়েছে তাঁকে, নিজের হাতে মাটি ছেনে, কাঁকর বেছে গড়তে  হয়েছে দেবীপ্রতিমা।

রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প যা কিছু  পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, স্থান পেয়েছে বিভিন্ন সংকলনে, সবগুলিই পরবর্তীকালে চলে এসেছে ‘গল্পগুচ্ছে’র বড় ছাতাটির আওতায়। তবে ‘গল্পগুচ্ছে’র সব গল্পকেই যে ছোটগল্প বলা যাবে বা বলতে হবে, এ নিয়ে রবীন্দ্রনাথের নিজেরও সম্ভবত কোন গোঁড়ামি ছিল না। আয়তনের বিচারে ‘মুকুট’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘নষ্টনীড় ‘ ইত্যাদি বেশ কিছু গল্পই ছোটগল্প পদবাচ্য নয়। অবশ্য ছোটগল্পকে শুধু যে কলেবরে ছোট হতে হবে তা তো নয়, যখন বিচিত্র বিষয়,পটভূমি বা চরিত্রের বিপুল বিস্তারের মধ্যে থেকে আলো পড়ে বিশেষ একটির মুখের ওপর, আশপাশের বাহুল্য থেকে আলাদা করে এনে তাকে দেখা হয় স্বতন্ত্রভাবে, তখনই তা হয়ে ওঠে যথার্থ ছোটগল্প। সেদিক দিয়ে বিচার করলে আকারে বড় হওয়া সত্ত্বেও ‘মাল্যদান’ বা ‘অতিথি’কে ছোটগল্পের এক্তিয়ারভুক্তই ভাবা চলে, কিন্তু বিষয়ের ব্যাপ্তির কারণে ‘নষ্টনীড়’কে তা ভাবা মুশকিল। রবীন্দ্রনাথের জীবৎকালেই তাঁর রচনাসংগ্রহে ‘নষ্টনীড়’ উপন্যাস হিসেবে স্থান পেয়েছে। একদিকে যখন তিনি অজস্র ছোটগল্প লিখে চলেছেন, তখন পাশাপাশিই চলছে তার ‘ফর্ম’ নিয়ে কাটাছেঁড়া, পরীক্ষা নিরীক্ষা। যার ফলশ্রুতি তাঁর শেষ বয়সের রচনা ‘লিপিকা’, ‘সে’ এবং ‘গল্পস্বল্প’। এরমধ্যে শেষের দুটির শ্রোতা যেহেতু বালখিল্য, তাই এদের শিশুপাঠ্যের দলে ফেলে দেবার একটা রেওয়াজ আছে। কিন্তু পড়তে গেলেই বোঝা যায় বহিরঙ্গে নিছক গালগল্প মনে হলেও অন্তরঙ্গে তার গভীর ভাবের দ্যোতনা। তাই সে গল্প শুনতে শুনতে পুপেদিদি যখন চোখ বড় করে বলে, “সত্যি কি, দাদামশাই?” তখন তার দাদামশাই উত্তরে বলে দেন সেই সার কথাটি, “সত্যির চেয়ে বেশি –গল্প।” এই দুটি লেখাতেই কবির সম্ভব অসম্ভবের নাগালের বাইরে এক ইচ্ছেখুশির চলন, যারমধ্যে ভেসে থাকে এক স্নেহশীল, রসিক দাদামশায়ের দাড়িগোঁফে ঢাকা হাসিমুখখানি। ‘সে’ প্রকাশিত হয় ১৩৪৪(ইং ১৯৩৭)এর বৈশাখে আর ‘গল্পস্বল্প’ ১৩৪৮ (ইং ১৯৪১)এর বৈশাখে। প্রথমটিতে উপরি পাওনা কবির নিজে হাতে আঁকা ছবি আর দ্বিতীয়টিতে প্রতিটি গল্পের সঙ্গে তার একটি করে কবিতায়ন। ‘গল্পস্বল্পের’ লেখাগুলির বেশিরভাগই যদিও লেখা হয়েছে ১৯৪১, অর্থাৎ কবিজীবনের শেষ বছরের ফেব্রুয়ারি মার্চের মধ্যে,  কিন্তু আশ্চর্য এটাই যে তার আগাগোড়া কোথাও এতটুকু ছায়া পড়েনি মৃত্যুর, টের পাওয়া যায়নি আর মাত্র মাস চারেক পরেই এই হাস্যমুখ কথক পাড়ি দেবেন কোন অগমপারে। ‘গল্পস্বল্পের’ শেষ গল্প ‘মুক্তকুন্তলা’। সেখানে খুদে বন্ধুরা নালিশ নিয়ে হাজির, “রূপকথা আমাদের চলবে না, আমাদের বয়স হয়ে গেছে।“ দাদামশায়  তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, “ভায়া রূপকথার কথাটা তো কিছুই নয়। ওর রূপটাই হল আসল। সেটা সব বয়সেই চলে।” শুরু হয় তাঁদের ছেলেবেলায় স্টেজ বেঁধে নাটক করার গল্প। গল্প শেষ হয় যথারীতি একটি ছড়ায়। গল্পকার এবার মঞ্চ ছেড়ে যান তাঁর নিজস্ব স্টাইলে, আমরা টের পাই জীবনমঞ্চে যবনিকা পড়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। ‘সময় হয়ে এল এবার / স্টেজের বাঁধন খুলে দেবার, / নেবে আসছে আঁধার যবনিকা। / খাতা হাতে এখন বুঝি / আসছে কানে কলম গুঁজি / কর্ম যাহার চরম হিসাব লিখা। / চোখের পরে দিয়ে ঢাকা/ ভোলা মনকে ভুলিয়ে রাখা / কোনোমতেই চলবে না তো আর। / অসীম দূরের প্রেক্ষণীতে / পড়বে ধরা শেষ গণিতে / জিত হয়েছে কিংবা হল হার।’ হঠাৎ যেন উপলব্ধি হয় ছেলেভোলানো গল্পগুলি তবে কি ছিল তাঁর নিজেকেই ভুলিয়ে রাখার ছল?’


Spread the love

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *